চর কুকরীমুকরী
ভোলার বুকে জেগে উঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর ককরী-মুকরী। এটিকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যান-গ্রোভ বনাঞ্চল,বন্যপ্রানী আর সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রায় ৪‘শ থেকে ৫‘শ বছরের পুরোনো এ চরে আজও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। বঙ্গোপসাগরের কুলে মেঘনা তেতুলিয়ার মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিশাল বনাঞ্চল বেষ্টিত এ দ্বীপে বিচরণ করছে অসংখ্য হরিণ, গরু-মহিষ,বানর এবং নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী।মাঝে মধ্যে চিতাবাঘেরও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এ দ্বীপকন্যার বুকে।এখানে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেলসহ আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা কুয়াকাটার চেয়েও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিনত হতে পারে। এর পাশাপাশি চর পাতিলা ও ঢালচরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথক দু’টি দ্বীপ।এখানেও শীতের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ হরিণ, বালিহাঁস মানুষের মনজুড়ানো পরিবেশের সূচনা করে। সম্প্রতি IUCN চরকুকরী মুকরীকে বিশ্ব জীব বৈচিত্রের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ভোলা সদর থেকে গাড়ী যোগে ১০০কি:মি: পাড়ি দিয়ে কচ্ছপিয়া পৌছে সেখান থেকে পূণরায় ৩০ কি:মি:নৌকা-ট্রলার বা স্পীডবোটে মেঘনা নদী অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌঁছাতে হয়।
বিস্তারিত চরকুকরীমুকরীঃ
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার মূল ভহ-খন্ড থেকে দক্ষিণে মেঘনা নদী পার হয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চরকুকরীমুকরীর অবস্থান। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনা ও শাহাবাজ চ্যানেল। দক্ষিণামেত্ম বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনার মিলনাস্থল।
প্রায় চারশত পঞ্চাশ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রমত্তা মেঘনার মোহনায় এ ভূ-খন্ডের পত্তন ঘটে। কথিত আছে পত্তনের পর প্রথম দিকে এ চরে কুকুর আর ইদুরের প্রভাব ছিল খুব বেশি। ইদুরের আর এক নাম মেকুর, আর তা থেকে এ চরের নামকরণ করা হয় ‘‘চরকুকরীমুকরী’’। ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে ওলন্দাজ, মগ কিংবা জলদস্যুদের ঘাটি ছিল এ কুকরীমুকরী। ১৮৬৮ সালে এ চরে প্রথম সার্ভে হয়। ১৮৭০-৭৫ সালে বরিশালের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বিভারিজ চরটি ভ্রমণ করেন। ১৯২২ সালে জার্মানির প্রিন্স ক্রাউন এ চরে বন্য মোষ শিকারে আসেন। চরটি পত্তণের পর প্রথমে মৎস্য শিকারীরা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তখন এ দ্বীপটি ছিল পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার অধীনে। পরে ভোলা জেলার লালমোহন থানার অধীনে ছিল বেশ কয়েক বছর। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটি চরফ্যাশন থানার অধীনে আসে। চরফ্যাশন থানার বৃহত্তর চরমানিকা ইউনিয়নের অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল এ দ্বীপ। ১৯৯২ সালে চরমানিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢালচর ও পাতিলাকে নিয়ে গঠিত হয় কুকরীমুকরী ইউনিয়ন। তখন পাতিলা, ঢালচর ও কুকরীমুকরী এ তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের আয়তন ছিল ৪০.৩৮ বর্গ কিলোমিটার। গত ২৫ মার্চ/২০১০ খ্রি. তারিখে কুকরীমুকরী ও পাতিলা নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরম্ন হয় কুকরীমুকরী ইউনিয়নের।
কুকরীমুকরী ইউনিয়নের আয়তন ৩৬.৭৯ বগ র্কিলোমিটার। তন্মোধ্যে কুকরীমুকরী দ্বীপের আয়তন ২৫ বর্গ কিলোমিটার । ইউনিয়নটির লোকসংখ্যা ১৮২৫৪ জন। স্থানীয় লোকজনের চেয়ে এ দ্বীপে বহিরাগতদের সংখ্যা বেশি। ইলিশ মৌশুমে এখানে ১০/১৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। দ্বীপের অধিবাসিদের ৯৫ ভাগ জেলে।
গত ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী বণ্যায় এ দ্বীপে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। বণ্যার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এ দ্বীপ সফর করেন। এ সময় তিনি জনৈক ইসমাইল হাওলাদারের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন এবং ইসমাইল হাওলাদারের মেয়েকে তাঁর পরিধেয় শালটি উপহার দেন। ইসমাইল হাওলাদার আজও সেই শালটি সযত্নে সংরক্ষণ করছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
ভোলা জেলা শহর থেকে সড়ক পথে চরফ্যাশন উপজেলা সদরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। চরফ্যাশন থানা সদর থেকে কচ্ছপিয়া পর্যমত্ম ২৫ কিঃমিঃ সড়ক পথে ভ্রমণ করে, নদী পথে আরো ১০/১৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৌঁছানো যায় চরকুকরীমুকরীতে। ভোলা জেলা সদর থেকে নদী পথে এ দ্বীপে পৌঁছুতে বুড়াগৌরাঙ্গ, শাহাবাজপুর, তেতুলিয়া, মেঘনা এবং সাগর মোহনা অতিক্রম করতে হয়। আর চরফ্যাশনের মূল ভূ-খন্ড থেকে দ্বীপে পৌছতে কচ্ছপিয়া থেকে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনা অতিক্রম করতে হয় ১০/১৫ কিঃ মিঃ। শীত মৌশুমে মেঘনা অত্রিক্রম করা সহজ হলেও বর্ষায় নদী থাকে উতলা, তরঙ্গবিক্ষুদ্ধ। তখন অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া নৌকা ট্রলারে মেঘনা অতিক্রম করে কুকরী দ্বীপে পা রাখার দূঃস্বপ্নও কেউ দেখে না। তবুও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কচ্ছপিয়া থেকে শতাধিক মানুষ এ দ্বীপের উদ্দেশ্যে মেঘনা অতিক্রম করে। এ দ্বীপের যাত্রীদের একমাত্র ভরসা নৌকা বা ট্রলার। বলতে গেলে নৌকা বা ট্রলারই মূল ভূ-খন্ডের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। প্রতিদিন দুপুর ১২.৩০টা এবং বিকাল ৪.০০ টায় কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলার নির্ভর যাত্রীরা মেঘনা অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌছায়। এছাড়া দ্বীপের সাথে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা নেই। ভ্রমণবিলাসী পর্যটকরা এ দ্বীপে আসে স্পীড বোট অথবা ভাড়া করা যাত্রীবাহি লঞ্চ নিয়ে । কুকরী থেকেঢালচরের দূরত্ব ১০ কিঃমিঃ। দুই দ্বীপের মধ্যে বহমান মেঘনা । কুকরী থেকে চরপাতিলার দূরত্ব ৮ কিঃ মিঃ । মধ্যে বহমান বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী। কুকরী থেকে ঢালচর ও পাতিলার যোগাযোগ হলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা। তবে, ঢালচর থেকে কালাইয়া কুকরী থেকে লালমোহন পর্যমত্ম যাত্রীবাহি লঞ্চ যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।
অভ্যমত্মরীণ যোগাযোগের জন্য ঢালচর, পাতিলা এবং কুকরী দ্বীপে মোট দুই কিঃ মিঃ এসবি সড়ক রয়েছে। ৩৪ লক্ষ টাকা এ দুই কিঃ মিঃ সড়ক করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ সড়ক দুটি প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কাচা সড়কের অবস্থা খুবই নগন্য । জলোচ্ছাস ও প্লাবনে রাসত্মা বেশিদিন স্থায়ী হয়না। চলতি বছরে এ দ্বীপের উপর দিয়ে ছোট-বড় প্রায় ১৫টির বেশি প্রাকৃতিক দূযোর্গ অতিবাহিত হয়েছে। তাই, দ্বীপের চলাচলের একমাত্র উপায় হলো পায় হাটা পথ। দ্বীপে কোন সড়ক যান নেই। বিস্ময়কর বিষয় হলো আজও এ দ্বীপে কোন রিক্সা নেই।
ডাক যোগাযোগঃ
কুকরী দ্বীপে একটি পোষ্ট অফিস আছে। পোষ্ট মাষ্টার, রাণার এবং পিয়নসহ লোকবল তিনজন। চরফ্যাশন থেকে আঞ্জুর হাট পোষ্ট অফিসকে ভায়া করে সপ্তাহে তিনদিন এখানে ডাক আসে। কিন্তু আঞ্জুর হাট কে বাদ দিয়ে দক্ষিণ আইচাকে ভায়া করে আসলে প্রতিদিনই এ দ্বীপে ডাক আসতে পারে।
বনাঞ্চলঃ
কুকরীমুকরীতে রয়েছে ২০১৭ হেক্টর আয়াতনের একটি প্রাণীর অভয়ারণ্য এবং ১৫ কিলোমিটার পস্নানটেশন। এখানকার ম্যানগ্রোথ অরণ্যে Sonneratia apetala, Breguiera gymnorhiza ইত্যাদি এবং পস্নানটেশনে Cocos nucifera, Mangifera indica গাছের আধিক্য বেশি। বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে সারস ও শঙ্খচিলজাতীয় বিভিন্ন পাখির পাশাপাশি প্রচুর Nycticorax nycticorax, Ardeola grayii, Bubulcus ibis- ও দেখা যায়। মাছের মধ্যে আছে ইলিশ, Danio spp.,Glassogobius giuris এবং সরীসৃপের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও কচ্ছপ অন্যতম।
বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চল কুকরীমুকরী দ্বীপের অলংকার। বনাঞ্চল দ্বীপের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। দ্বীপবাসিকে করেছে গর্বিত। কিন্তু মূল্যবান এ বনজ সম্পদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত দূর্বল যে, কাঠ পাচারকারী বনদস্যূরা সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে দ্বীপের বনাঞ্চলে হামলা চালায় । এতে বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কুকরীমুকরী রেঞ্জকে ঢালচর পাতিলা এবং কুকরীমুকরী এ তিনটি বিটে বিভক্ত করা হয়েছে। বিটগুলোর প্রায় ১৮টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছের চারা সৃজন করা হয়। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে এ চর এলাকায় বনায়নের কাজ শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত গতিতে বর্ধিত করা হচ্ছে। তিনটি বিটে সৃজিত আঠারটি বাগানের মধ্যে মূল কুকরীমুকরী বিটের অধীনে রয়েছে ০৭টি। এগুলো হলোঃ চরদিঘল, চরজমির, চরসফি, চরপোটকা, চরপাতিলা, চরনিরালা, চরবদনা। পাতিলা বিটে রয়েছে, চরপাতিলা, চরআলীম এবং চর রগন। ঢালচর বিটের অধীনে রয়েছে ৮টি বাগান। এগুলো হলোঃ চরফয়েজ, চরমুক্তা, চরহাকিম, চরবৈকাল, পূর্ব-পশ্চিম ঢালচর, পূর্ব ঢালচর, চর শাহাজালাল এবং চর মোখলেছ। এ বিচ্ছিন্ন আঠারটি চরে সৃজিত বাগানের পরিমান হলো ১৮৫২০.৬৮ একর।
রেঞ্জ অফিস সহ কুকরী ও ঢালচরে দুটি করে চারটি সাব-ক্যাম্প এর মধ্যে দিয়ে বন বিভাগ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমগ্র চরাঞ্চলে মাত্র ০৯ জন বনরক্ষী কর্মরত আছে । এসব বনরক্ষীদের আত্মরক্ষায় কিংবা বনদস্যূদেরকে মোকাবেলায় তেমন কোন ভারী অস্ত্র নেই। কেওড়া গাছের লাঠিই বনরক্ষীদের একমাত্র ভরসা। তিনটি স্পিড বোটের মধ্যে ইতোমধ্যেই দুটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বন বলাকা ও বনফুল নামের দুটি ইঞ্জিত চালিত নৌকা আছে। তাও প্রায়ই বিকল থাকে। কুকরীর বনপ্রহরীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।১৯৭৯ সালে কুকরীমুকরী বনে প্রথম হরিণ, বনমোরগ, বানর, মথুয়া, কাঠময়ূর এবং কোয়েল অবমুক্ত করা হয়। যা বর্তমানে বংশ বিসত্মার করে সমসত্ম উপ-কূলের বনাঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে।
প্রায় ২.৫০ একর জমির উপরে কুকরীর রেঞ্জ অফিস প্রতিষ্ঠিত। অফিসে আওতায় রয়েছে ৬ টি স্টাফ কোয়ার্টার। যার মধ্যে দুটি ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বসত্ম হওয়ার পর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যগুলো পরিত্যক্ত হওয়ার অপেক্ষা গুণছে মাত্র। আবাসিক সংকটের কারণে বনকর্মীদেরকে কুকরীচরের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
কুকরী রেঞ্জের বনগুলো থেকে বছরে ২৫ মনেরও বেশি মধূ সংগ্রহ হচ্ছে। যা সরকারী রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে। প্রতিমন মধূ একশত ষাট দরে। বনে কাকড়া পাওয়া যাচ্ছে বছরে ৫২৯০ কেজি । প্রতিকেজি কাকড়ার মূল্য সরকারী হিসাব অনুযায়ী ১.০৭ টাকা। তবে, বেসরকারীভাবে দ্বীপে এর আরো বেশি দাম রয়েছে। কুকরী বাগানের প্রতিটি খাল মৌশুম ভিত্তিক ৫/৭ হাজার টাকায় ইজারা হচ্ছে। এ খালে জেলেরা কাকড়াসহ নানান প্রজাতির মাছ শিকার করছে।
স্বাস্থ্যসেবাঃ
কুকরীমুকরী দ্বীপে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সুবিধার মতো মৌলিক মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোষ্ট ট্রাস্ট সরকারের পাশাপাশি নিরলসভাবে কাজ করছে। তথাপিও অশিক্ষিত ও কু-সংস্কারের ঘেরে আবদ্ধ দ্বীপবাসি তন্ত্র-মন্ত্র এবং ঝার ফুকে বিশ্বাসি। রোগ-ব্যাধি এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগকে এ দ্বীপ বাসি উপরওয়ালার প্রদত্ত শাসিত্ম বলে মনে করেন। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ এ দ্বীপে মেলে না। জ্বর, কাঁশি, সর্দি, পেটের পীড়া ইত্যাদি সাধারণ ব্যধির কিছু ঔষধ পাওয়া যায় মাত্র । তবে, মূল্য মূল ভূ-খন্ডের তুলনায় দুই তিন গুন বেশি। ঢালচর, পাতিলা ও কুকরীমুকরী মিলে সর্বমোট ৮০ (আশি) টি গভীর নলকূপ রয়েছে। দ্বীপের মানুষ বিশুদ্ধ পানি অভাবে লবনাক্ত পানিই বেশি ব্যবহার করছে। পুষ্টিহীন মা ও শিশুর সংখ্যা শতকরা ৮০ ভাগ।
শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
কুকরীমুকরী ইউনিয়নে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ০৭ টি রেজিষ্ট্রার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয, দুটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। দ্বীপের লোকসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল । দ্বীপে স্কুলগামী ৬-১০ বছরের শিশুর সংখ্যা ২৫৮২ জন, ভর্তিকৃত শিশু ২৪১০ জন, ভর্তিবিহীন শিশু ১৭০ জন। শিক্ষার হার শতকরা ২৮.৫৫ ভাগ। প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে দু বেলা অন্ন সংস্থানের লক্ষ্যে দ্বীপ জীবনে চলছে নিরমত্মর প্রচেষ্টা । তাই অধিবাসিরা ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার চেয়ে উপার্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী। বাগদা এবং ইলিশের মৌশুমে বড়দের তুলনায় শিশু-কিশোরদের আয় একেবারে কম নয়। তাই নগদ আয়ে তুষ্ট হয়ে অবিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয় বিমূখ করে তুলছে। কুকরীমুকরী দ্বীপের হাতে গোনা ২৩ জন শিক্ষিত যুবককে নিয়ে কুকরী বাজার ভিত্তিক একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সনে। প্রতিদিন পটুয়াখালীর কালাইয়া থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা এ পাঠাগারের জন্য আনা হয়। সন্ধ্যার পর যুবকেরা পাঠাগারে বসে আর একজনে এ পত্রিকা পাঠ করে সবাইকে শোনায়। অন্যদিকে দ্বীপে কর্মরত বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোষ্ট ট্রাস্ট সহ বেশ কিছু এনজিও এ দ্বীপে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে তারা দ্বীপের জেলে পল্লীর শিশুদেরকে স্কুল মূখী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ জন্য শিক্ষার্থী পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করছেন এনজিওগুলো।
কৃষি সম্পদঃ
কুকরীমুকরীতে মোট ৫ হাজার একর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। মূলতঃ দ্বীপটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে চাষাবাদ হয়। এ দ্বীপের প্রধান ফসল বিভিন্ন প্রজাতির ধান। রবি মৌশুমে বিভিন্ন প্রকারের ডাল, মরিচ, আলু, বাদাম, বাঙ্গি, তরমুজ ও বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
মৎস্য সম্পদঃ
এ দ্বীপের অধিকাংশ লোকের জীবিকা মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। দ্বীপ সন্নিকটস্থ নদী সমূহে ও বঙ্গোপসাগরে জেলেরা ইলিশ, চিংড়ি, কোরাল, রূপচাদা, পাঙ্গাশ, আইড়, চিতল, মেদ, জাবাকই, লটুয়া, বাগৈর ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
চরকুকরীমুকরীর অপার সম্ভাবনাঃ
কুকরীমুকরীর বনাঞ্চল এ দ্বীপের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বনবিভাগ কুকরীমুকরীতে একটি বন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে ২০১৭ হেক্টর বনাঞ্চল রয়েছে। এখানকার প্রধান বৃক্ষ কেওরা, অর্থনৈতিক বিচারে যা ততটা সমৃদ্ধ নয়। এ কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চিমত্মা মাথায় রেখে মূল্যবান সুন্দরী, পশুর, খুলসী , সিংরা, গেওরা গাছ সৃজন করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার লক্ষ্যে কাজ করছে বন গবেষনা কেন্দ্র। দ্বীপের ভূ-প্রকৃতি সুন্দরী, গেওয়া, পশুর বৃক্ষের জন্য উপযোগী। তাই এখানে কেওড়ার পাশাপাশি এ সকল বৃক্ষ সৃজনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ (দশ) একর জমিতে সুন্দরীর চারা সৃজন করা হয়েছে। উৎপাদন করা হয়েছে ৫০ হাজার চারা। লাগানো সুন্দরী গাছের চারাগুলো ইতোমধ্যে দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। উদ্বেগের কথা হলো এ গাছের চারাগুলোর শত্রু বেশি। সরু প্রকৃতি হওয়ায় বনে বিচরণকারী রাখাল ও খুটা জালের জেলেরা উদীয়মান এ সুন্দরীর চারাগুলো কেটে নিচ্ছে প্রতিদিনই। যথেষ্ট লোকবল কিংবা দূর্গম যোগাযোগের কারণে সুন্দরীর চারাগুলো রক্ষা করা বেশ কঠিণ হয়ে পরেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে এ দ্বীপে গবেষণার কাজ শুরু হয়। ২০০০ সনে এ বনে প্রথমে বাঁশ ও বেত সৃজনের সম্ভাবনার কথা জানা গেছে। এতে সাফল্য লাভ করলে কুকরী দ্বীপের ভাগ্যের দার খুলে যাবে অচিরেই। নিকট ভবিষ্যতে সুদর্শণ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, খুলসী ইত্যাদি বৃক্ষ কুকরী দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। এর সাথে বনের আকর্ষণ বৃদ্ধি করবে হরিণ, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোড়গ, কাঠময়ূর, মথুরা এবং কোয়েল। হয়তো ভবিষ্যতে বাঘ সিংহের মতো প্রজাতির প্রাণীরাও আশ্রিত হবে এ বনে।
বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল , মায়াবি হরিণের দল আর মন ভুলানো সমুদ্র সৈকত কুকরীমুকরীকে ভ্রমণ বিলাসীদের তীর্থ ভূমিতে পরিণত করতে পারে। শীতের মৌশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির উপস্থিতি এ পর্যটন কেন্দ্রকে করে তুলবে আরো মনোরম। কুকরীমুকরীতে বর্তমানে ১৭টিরও বেশি বন আছে। তন্মোধ্যে ১৭৬৮ একর জমিতে সৃজিত আছে কুকরীমুকরীর বাগান। চরফ্যাশন উপজেলার ৪৮টি মুজিব কেল্লার মধ্যে একটি কুকরী বাগানে। কেল্লাটি বর্তমানে বনবিভাগের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের আমলে বণ্যার সময় লোকজনকে আশ্রয় নেয়ার জন্য সরকার এ কেল্লা তৈরী করেন। যুগের পরিবর্তনে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক পাকা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কারণে এ কেল্লাগুলোর গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায়। তবে মূল ভূ-খন্ডের কেল্লার গুরুত্ব বা যত্ন না থাকলেও কুকরীমুকরী দ্বীপের চারটি কেল্লার এখনো গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এখানে বেরিবাঁধ নেই। আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও অপ্রতুল। বণ্যা ও জলোচ্ছাস উপকূলীয় মানুষের নিত্য দিনের সাথী। তবুও বাগানের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত মুজিব কেল্লার গুরুত্ব রয়েই গেছে।
এ কেল্লাটি হতে পারে কুকরী দ্বীপের পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র। কারণ, এ বনে রয়েছে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। জোযারের সময় বাগান প্লাবিত হলে দলবেধে হরিণগুলো আশ্রয় নেয় এ কেল্লায়। আবার সমগ্র বণে একটি মাত্র মিঠা পানির কূপ রয়েছে কেল্লার ভিতরে। হরিণ লবনাক্ত পানি পান করে না। বিধায় তৃষ্ণা পেলে হরিণের পাল ছুটে এসে কিল্লার কূপে। তাই প্রতিনিয়তই শত শত হরিণের পদচারণায় মূখরিত থাকে এ মুজিব কেল্লা। যার কারণে, ভ্রমণ পিপাশুরা হরিণ দেখার ইচ্ছায় প্রতিদিনই মুজিব কেল্লায় ভীড় জমায়। কেল্লাটি ৩-০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। যার চারদিকে কেওড়া বাগান। বাগানের প্রবেশ দ্বার দিয়ে বয়ে গেছে সরু খাল। খাল অল্প কিছুদূর এগুতেই সাগর মোহনা। কেলস্না হতে সাগর সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কুকরীমুকরী বাজার থেকে কেল্লার দূরত্ব সারে চার কিলোমিটার। কিন্তু এর মাঝে যোগাযোগের কোন সড়ক নেই। কর্দমাক্ত মাঠ অতিক্রম করে কেল্লায় পৌঁছতে হয়। বিকল্প হলো নৌ-পথ।
বালি চিক চিক সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর মজা পেতে হলে যেতে হবে কুকরীমুকরীর বালু চরে। চরের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে ১৬৯৬ একর বাগান। এ বাগানকে বলা হয় চরজমির। কিন্তু চরজমিরের পশ্চিম এবং কলিরচরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে অনমত্ম সাগর সৈকতে আসতে হবে নৌ-যানে করে। কুকরীমুকরী বাজার থেকে মুজিব কেল্লা পর্যমত্ম সড়ক নির্মাণ এবং কেল্লা থেকে সাগর পর্যমত্ম পাঁচ কিলোমিটার খালটি সংস্কার করে দর্শণীয় কেল্লাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত করা যায়।
চর কুকরীমুকরী ছবি - নেট
ভোলার বুকে জেগে উঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর ককরী-মুকরী। এটিকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যান-গ্রোভ বনাঞ্চল,বন্যপ্রানী আর সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রায় ৪‘শ থেকে ৫‘শ বছরের পুরোনো এ চরে আজও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। বঙ্গোপসাগরের কুলে মেঘনা তেতুলিয়ার মোহনায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বিশাল বনাঞ্চল বেষ্টিত এ দ্বীপে বিচরণ করছে অসংখ্য হরিণ, গরু-মহিষ,বানর এবং নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী।মাঝে মধ্যে চিতাবাঘেরও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এ দ্বীপকন্যার বুকে।এখানে নিরাপদ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেলসহ আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তা কুয়াকাটার চেয়েও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিনত হতে পারে। এর পাশাপাশি চর পাতিলা ও ঢালচরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথক দু’টি দ্বীপ।এখানেও শীতের সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ হরিণ, বালিহাঁস মানুষের মনজুড়ানো পরিবেশের সূচনা করে। সম্প্রতি IUCN চরকুকরী মুকরীকে বিশ্ব জীব বৈচিত্রের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ভোলা সদর থেকে গাড়ী যোগে ১০০কি:মি: পাড়ি দিয়ে কচ্ছপিয়া পৌছে সেখান থেকে পূণরায় ৩০ কি:মি:নৌকা-ট্রলার বা স্পীডবোটে মেঘনা নদী অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌঁছাতে হয়।
বিস্তারিত চরকুকরীমুকরীঃ
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার মূল ভহ-খন্ড থেকে দক্ষিণে মেঘনা নদী পার হয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চরকুকরীমুকরীর অবস্থান। দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনা ও শাহাবাজ চ্যানেল। দক্ষিণামেত্ম বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনার মিলনাস্থল।
প্রায় চারশত পঞ্চাশ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে প্রমত্তা মেঘনার মোহনায় এ ভূ-খন্ডের পত্তন ঘটে। কথিত আছে পত্তনের পর প্রথম দিকে এ চরে কুকুর আর ইদুরের প্রভাব ছিল খুব বেশি। ইদুরের আর এক নাম মেকুর, আর তা থেকে এ চরের নামকরণ করা হয় ‘‘চরকুকরীমুকরী’’। ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে ওলন্দাজ, মগ কিংবা জলদস্যুদের ঘাটি ছিল এ কুকরীমুকরী। ১৮৬৮ সালে এ চরে প্রথম সার্ভে হয়। ১৮৭০-৭৫ সালে বরিশালের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বিভারিজ চরটি ভ্রমণ করেন। ১৯২২ সালে জার্মানির প্রিন্স ক্রাউন এ চরে বন্য মোষ শিকারে আসেন। চরটি পত্তণের পর প্রথমে মৎস্য শিকারীরা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তখন এ দ্বীপটি ছিল পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার অধীনে। পরে ভোলা জেলার লালমোহন থানার অধীনে ছিল বেশ কয়েক বছর। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটি চরফ্যাশন থানার অধীনে আসে। চরফ্যাশন থানার বৃহত্তর চরমানিকা ইউনিয়নের অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল এ দ্বীপ। ১৯৯২ সালে চরমানিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢালচর ও পাতিলাকে নিয়ে গঠিত হয় কুকরীমুকরী ইউনিয়ন। তখন পাতিলা, ঢালচর ও কুকরীমুকরী এ তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়নের আয়তন ছিল ৪০.৩৮ বর্গ কিলোমিটার। গত ২৫ মার্চ/২০১০ খ্রি. তারিখে কুকরীমুকরী ও পাতিলা নিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরম্ন হয় কুকরীমুকরী ইউনিয়নের।
কুকরীমুকরী ইউনিয়নের আয়তন ৩৬.৭৯ বগ র্কিলোমিটার। তন্মোধ্যে কুকরীমুকরী দ্বীপের আয়তন ২৫ বর্গ কিলোমিটার । ইউনিয়নটির লোকসংখ্যা ১৮২৫৪ জন। স্থানীয় লোকজনের চেয়ে এ দ্বীপে বহিরাগতদের সংখ্যা বেশি। ইলিশ মৌশুমে এখানে ১০/১৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। দ্বীপের অধিবাসিদের ৯৫ ভাগ জেলে।
গত ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী বণ্যায় এ দ্বীপে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। বণ্যার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এ দ্বীপ সফর করেন। এ সময় তিনি জনৈক ইসমাইল হাওলাদারের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন এবং ইসমাইল হাওলাদারের মেয়েকে তাঁর পরিধেয় শালটি উপহার দেন। ইসমাইল হাওলাদার আজও সেই শালটি সযত্নে সংরক্ষণ করছেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
ভোলা জেলা শহর থেকে সড়ক পথে চরফ্যাশন উপজেলা সদরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। চরফ্যাশন থানা সদর থেকে কচ্ছপিয়া পর্যমত্ম ২৫ কিঃমিঃ সড়ক পথে ভ্রমণ করে, নদী পথে আরো ১০/১৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৌঁছানো যায় চরকুকরীমুকরীতে। ভোলা জেলা সদর থেকে নদী পথে এ দ্বীপে পৌঁছুতে বুড়াগৌরাঙ্গ, শাহাবাজপুর, তেতুলিয়া, মেঘনা এবং সাগর মোহনা অতিক্রম করতে হয়। আর চরফ্যাশনের মূল ভূ-খন্ড থেকে দ্বীপে পৌছতে কচ্ছপিয়া থেকে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনা অতিক্রম করতে হয় ১০/১৫ কিঃ মিঃ। শীত মৌশুমে মেঘনা অত্রিক্রম করা সহজ হলেও বর্ষায় নদী থাকে উতলা, তরঙ্গবিক্ষুদ্ধ। তখন অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া নৌকা ট্রলারে মেঘনা অতিক্রম করে কুকরী দ্বীপে পা রাখার দূঃস্বপ্নও কেউ দেখে না। তবুও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কচ্ছপিয়া থেকে শতাধিক মানুষ এ দ্বীপের উদ্দেশ্যে মেঘনা অতিক্রম করে। এ দ্বীপের যাত্রীদের একমাত্র ভরসা নৌকা বা ট্রলার। বলতে গেলে নৌকা বা ট্রলারই মূল ভূ-খন্ডের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। প্রতিদিন দুপুর ১২.৩০টা এবং বিকাল ৪.০০ টায় কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলার নির্ভর যাত্রীরা মেঘনা অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌছায়। এছাড়া দ্বীপের সাথে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা নেই। ভ্রমণবিলাসী পর্যটকরা এ দ্বীপে আসে স্পীড বোট অথবা ভাড়া করা যাত্রীবাহি লঞ্চ নিয়ে । কুকরী থেকেঢালচরের দূরত্ব ১০ কিঃমিঃ। দুই দ্বীপের মধ্যে বহমান মেঘনা । কুকরী থেকে চরপাতিলার দূরত্ব ৮ কিঃ মিঃ । মধ্যে বহমান বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী। কুকরী থেকে ঢালচর ও পাতিলার যোগাযোগ হলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা। তবে, ঢালচর থেকে কালাইয়া কুকরী থেকে লালমোহন পর্যমত্ম যাত্রীবাহি লঞ্চ যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।
অভ্যমত্মরীণ যোগাযোগের জন্য ঢালচর, পাতিলা এবং কুকরী দ্বীপে মোট দুই কিঃ মিঃ এসবি সড়ক রয়েছে। ৩৪ লক্ষ টাকা এ দুই কিঃ মিঃ সড়ক করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ সড়ক দুটি প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কাচা সড়কের অবস্থা খুবই নগন্য । জলোচ্ছাস ও প্লাবনে রাসত্মা বেশিদিন স্থায়ী হয়না। চলতি বছরে এ দ্বীপের উপর দিয়ে ছোট-বড় প্রায় ১৫টির বেশি প্রাকৃতিক দূযোর্গ অতিবাহিত হয়েছে। তাই, দ্বীপের চলাচলের একমাত্র উপায় হলো পায় হাটা পথ। দ্বীপে কোন সড়ক যান নেই। বিস্ময়কর বিষয় হলো আজও এ দ্বীপে কোন রিক্সা নেই।
ডাক যোগাযোগঃ
কুকরী দ্বীপে একটি পোষ্ট অফিস আছে। পোষ্ট মাষ্টার, রাণার এবং পিয়নসহ লোকবল তিনজন। চরফ্যাশন থেকে আঞ্জুর হাট পোষ্ট অফিসকে ভায়া করে সপ্তাহে তিনদিন এখানে ডাক আসে। কিন্তু আঞ্জুর হাট কে বাদ দিয়ে দক্ষিণ আইচাকে ভায়া করে আসলে প্রতিদিনই এ দ্বীপে ডাক আসতে পারে।
বনাঞ্চলঃ
কুকরীমুকরীতে রয়েছে ২০১৭ হেক্টর আয়াতনের একটি প্রাণীর অভয়ারণ্য এবং ১৫ কিলোমিটার পস্নানটেশন। এখানকার ম্যানগ্রোথ অরণ্যে Sonneratia apetala, Breguiera gymnorhiza ইত্যাদি এবং পস্নানটেশনে Cocos nucifera, Mangifera indica গাছের আধিক্য বেশি। বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে সারস ও শঙ্খচিলজাতীয় বিভিন্ন পাখির পাশাপাশি প্রচুর Nycticorax nycticorax, Ardeola grayii, Bubulcus ibis- ও দেখা যায়। মাছের মধ্যে আছে ইলিশ, Danio spp.,Glassogobius giuris এবং সরীসৃপের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও কচ্ছপ অন্যতম।
বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চল কুকরীমুকরী দ্বীপের অলংকার। বনাঞ্চল দ্বীপের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। দ্বীপবাসিকে করেছে গর্বিত। কিন্তু মূল্যবান এ বনজ সম্পদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত দূর্বল যে, কাঠ পাচারকারী বনদস্যূরা সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে দ্বীপের বনাঞ্চলে হামলা চালায় । এতে বনাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কুকরীমুকরী রেঞ্জকে ঢালচর পাতিলা এবং কুকরীমুকরী এ তিনটি বিটে বিভক্ত করা হয়েছে। বিটগুলোর প্রায় ১৮টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ গাছের চারা সৃজন করা হয়। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে এ চর এলাকায় বনায়নের কাজ শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত গতিতে বর্ধিত করা হচ্ছে। তিনটি বিটে সৃজিত আঠারটি বাগানের মধ্যে মূল কুকরীমুকরী বিটের অধীনে রয়েছে ০৭টি। এগুলো হলোঃ চরদিঘল, চরজমির, চরসফি, চরপোটকা, চরপাতিলা, চরনিরালা, চরবদনা। পাতিলা বিটে রয়েছে, চরপাতিলা, চরআলীম এবং চর রগন। ঢালচর বিটের অধীনে রয়েছে ৮টি বাগান। এগুলো হলোঃ চরফয়েজ, চরমুক্তা, চরহাকিম, চরবৈকাল, পূর্ব-পশ্চিম ঢালচর, পূর্ব ঢালচর, চর শাহাজালাল এবং চর মোখলেছ। এ বিচ্ছিন্ন আঠারটি চরে সৃজিত বাগানের পরিমান হলো ১৮৫২০.৬৮ একর।
রেঞ্জ অফিস সহ কুকরী ও ঢালচরে দুটি করে চারটি সাব-ক্যাম্প এর মধ্যে দিয়ে বন বিভাগ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমগ্র চরাঞ্চলে মাত্র ০৯ জন বনরক্ষী কর্মরত আছে । এসব বনরক্ষীদের আত্মরক্ষায় কিংবা বনদস্যূদেরকে মোকাবেলায় তেমন কোন ভারী অস্ত্র নেই। কেওড়া গাছের লাঠিই বনরক্ষীদের একমাত্র ভরসা। তিনটি স্পিড বোটের মধ্যে ইতোমধ্যেই দুটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বন বলাকা ও বনফুল নামের দুটি ইঞ্জিত চালিত নৌকা আছে। তাও প্রায়ই বিকল থাকে। কুকরীর বনপ্রহরীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।১৯৭৯ সালে কুকরীমুকরী বনে প্রথম হরিণ, বনমোরগ, বানর, মথুয়া, কাঠময়ূর এবং কোয়েল অবমুক্ত করা হয়। যা বর্তমানে বংশ বিসত্মার করে সমসত্ম উপ-কূলের বনাঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে।
প্রায় ২.৫০ একর জমির উপরে কুকরীর রেঞ্জ অফিস প্রতিষ্ঠিত। অফিসে আওতায় রয়েছে ৬ টি স্টাফ কোয়ার্টার। যার মধ্যে দুটি ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বসত্ম হওয়ার পর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যগুলো পরিত্যক্ত হওয়ার অপেক্ষা গুণছে মাত্র। আবাসিক সংকটের কারণে বনকর্মীদেরকে কুকরীচরের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
কুকরী রেঞ্জের বনগুলো থেকে বছরে ২৫ মনেরও বেশি মধূ সংগ্রহ হচ্ছে। যা সরকারী রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে। প্রতিমন মধূ একশত ষাট দরে। বনে কাকড়া পাওয়া যাচ্ছে বছরে ৫২৯০ কেজি । প্রতিকেজি কাকড়ার মূল্য সরকারী হিসাব অনুযায়ী ১.০৭ টাকা। তবে, বেসরকারীভাবে দ্বীপে এর আরো বেশি দাম রয়েছে। কুকরী বাগানের প্রতিটি খাল মৌশুম ভিত্তিক ৫/৭ হাজার টাকায় ইজারা হচ্ছে। এ খালে জেলেরা কাকড়াসহ নানান প্রজাতির মাছ শিকার করছে।
স্বাস্থ্যসেবাঃ
কুকরীমুকরী দ্বীপে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সুবিধার মতো মৌলিক মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোষ্ট ট্রাস্ট সরকারের পাশাপাশি নিরলসভাবে কাজ করছে। তথাপিও অশিক্ষিত ও কু-সংস্কারের ঘেরে আবদ্ধ দ্বীপবাসি তন্ত্র-মন্ত্র এবং ঝার ফুকে বিশ্বাসি। রোগ-ব্যাধি এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগকে এ দ্বীপ বাসি উপরওয়ালার প্রদত্ত শাসিত্ম বলে মনে করেন। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ এ দ্বীপে মেলে না। জ্বর, কাঁশি, সর্দি, পেটের পীড়া ইত্যাদি সাধারণ ব্যধির কিছু ঔষধ পাওয়া যায় মাত্র । তবে, মূল্য মূল ভূ-খন্ডের তুলনায় দুই তিন গুন বেশি। ঢালচর, পাতিলা ও কুকরীমুকরী মিলে সর্বমোট ৮০ (আশি) টি গভীর নলকূপ রয়েছে। দ্বীপের মানুষ বিশুদ্ধ পানি অভাবে লবনাক্ত পানিই বেশি ব্যবহার করছে। পুষ্টিহীন মা ও শিশুর সংখ্যা শতকরা ৮০ ভাগ।
শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
কুকরীমুকরী ইউনিয়নে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ০৭ টি রেজিষ্ট্রার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয, দুটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। দ্বীপের লোকসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল । দ্বীপে স্কুলগামী ৬-১০ বছরের শিশুর সংখ্যা ২৫৮২ জন, ভর্তিকৃত শিশু ২৪১০ জন, ভর্তিবিহীন শিশু ১৭০ জন। শিক্ষার হার শতকরা ২৮.৫৫ ভাগ। প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে দু বেলা অন্ন সংস্থানের লক্ষ্যে দ্বীপ জীবনে চলছে নিরমত্মর প্রচেষ্টা । তাই অধিবাসিরা ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার চেয়ে উপার্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী। বাগদা এবং ইলিশের মৌশুমে বড়দের তুলনায় শিশু-কিশোরদের আয় একেবারে কম নয়। তাই নগদ আয়ে তুষ্ট হয়ে অবিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয় বিমূখ করে তুলছে। কুকরীমুকরী দ্বীপের হাতে গোনা ২৩ জন শিক্ষিত যুবককে নিয়ে কুকরী বাজার ভিত্তিক একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সনে। প্রতিদিন পটুয়াখালীর কালাইয়া থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা এ পাঠাগারের জন্য আনা হয়। সন্ধ্যার পর যুবকেরা পাঠাগারে বসে আর একজনে এ পত্রিকা পাঠ করে সবাইকে শোনায়। অন্যদিকে দ্বীপে কর্মরত বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোষ্ট ট্রাস্ট সহ বেশ কিছু এনজিও এ দ্বীপে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে তারা দ্বীপের জেলে পল্লীর শিশুদেরকে স্কুল মূখী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ জন্য শিক্ষার্থী পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করছেন এনজিওগুলো।
কৃষি সম্পদঃ
কুকরীমুকরীতে মোট ৫ হাজার একর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। মূলতঃ দ্বীপটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে চাষাবাদ হয়। এ দ্বীপের প্রধান ফসল বিভিন্ন প্রজাতির ধান। রবি মৌশুমে বিভিন্ন প্রকারের ডাল, মরিচ, আলু, বাদাম, বাঙ্গি, তরমুজ ও বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
মৎস্য সম্পদঃ
এ দ্বীপের অধিকাংশ লোকের জীবিকা মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। দ্বীপ সন্নিকটস্থ নদী সমূহে ও বঙ্গোপসাগরে জেলেরা ইলিশ, চিংড়ি, কোরাল, রূপচাদা, পাঙ্গাশ, আইড়, চিতল, মেদ, জাবাকই, লটুয়া, বাগৈর ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
চরকুকরীমুকরীর অপার সম্ভাবনাঃ
কুকরীমুকরীর বনাঞ্চল এ দ্বীপের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বনবিভাগ কুকরীমুকরীতে একটি বন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে ২০১৭ হেক্টর বনাঞ্চল রয়েছে। এখানকার প্রধান বৃক্ষ কেওরা, অর্থনৈতিক বিচারে যা ততটা সমৃদ্ধ নয়। এ কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চিমত্মা মাথায় রেখে মূল্যবান সুন্দরী, পশুর, খুলসী , সিংরা, গেওরা গাছ সৃজন করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার লক্ষ্যে কাজ করছে বন গবেষনা কেন্দ্র। দ্বীপের ভূ-প্রকৃতি সুন্দরী, গেওয়া, পশুর বৃক্ষের জন্য উপযোগী। তাই এখানে কেওড়ার পাশাপাশি এ সকল বৃক্ষ সৃজনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ (দশ) একর জমিতে সুন্দরীর চারা সৃজন করা হয়েছে। উৎপাদন করা হয়েছে ৫০ হাজার চারা। লাগানো সুন্দরী গাছের চারাগুলো ইতোমধ্যে দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। উদ্বেগের কথা হলো এ গাছের চারাগুলোর শত্রু বেশি। সরু প্রকৃতি হওয়ায় বনে বিচরণকারী রাখাল ও খুটা জালের জেলেরা উদীয়মান এ সুন্দরীর চারাগুলো কেটে নিচ্ছে প্রতিদিনই। যথেষ্ট লোকবল কিংবা দূর্গম যোগাযোগের কারণে সুন্দরীর চারাগুলো রক্ষা করা বেশ কঠিণ হয়ে পরেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে এ দ্বীপে গবেষণার কাজ শুরু হয়। ২০০০ সনে এ বনে প্রথমে বাঁশ ও বেত সৃজনের সম্ভাবনার কথা জানা গেছে। এতে সাফল্য লাভ করলে কুকরী দ্বীপের ভাগ্যের দার খুলে যাবে অচিরেই। নিকট ভবিষ্যতে সুদর্শণ সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, খুলসী ইত্যাদি বৃক্ষ কুকরী দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। এর সাথে বনের আকর্ষণ বৃদ্ধি করবে হরিণ, বানর, বনবিড়াল, উদবিড়াল, শেয়াল, বনমোড়গ, কাঠময়ূর, মথুরা এবং কোয়েল। হয়তো ভবিষ্যতে বাঘ সিংহের মতো প্রজাতির প্রাণীরাও আশ্রিত হবে এ বনে।
বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল , মায়াবি হরিণের দল আর মন ভুলানো সমুদ্র সৈকত কুকরীমুকরীকে ভ্রমণ বিলাসীদের তীর্থ ভূমিতে পরিণত করতে পারে। শীতের মৌশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির উপস্থিতি এ পর্যটন কেন্দ্রকে করে তুলবে আরো মনোরম। কুকরীমুকরীতে বর্তমানে ১৭টিরও বেশি বন আছে। তন্মোধ্যে ১৭৬৮ একর জমিতে সৃজিত আছে কুকরীমুকরীর বাগান। চরফ্যাশন উপজেলার ৪৮টি মুজিব কেল্লার মধ্যে একটি কুকরী বাগানে। কেল্লাটি বর্তমানে বনবিভাগের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকারের আমলে বণ্যার সময় লোকজনকে আশ্রয় নেয়ার জন্য সরকার এ কেল্লা তৈরী করেন। যুগের পরিবর্তনে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক পাকা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কারণে এ কেল্লাগুলোর গুরুত্ব অনেকাংশে হ্রাস পায়। তবে মূল ভূ-খন্ডের কেল্লার গুরুত্ব বা যত্ন না থাকলেও কুকরীমুকরী দ্বীপের চারটি কেল্লার এখনো গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এখানে বেরিবাঁধ নেই। আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও অপ্রতুল। বণ্যা ও জলোচ্ছাস উপকূলীয় মানুষের নিত্য দিনের সাথী। তবুও বাগানের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত মুজিব কেল্লার গুরুত্ব রয়েই গেছে।
এ কেল্লাটি হতে পারে কুকরী দ্বীপের পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র। কারণ, এ বনে রয়েছে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। জোযারের সময় বাগান প্লাবিত হলে দলবেধে হরিণগুলো আশ্রয় নেয় এ কেল্লায়। আবার সমগ্র বণে একটি মাত্র মিঠা পানির কূপ রয়েছে কেল্লার ভিতরে। হরিণ লবনাক্ত পানি পান করে না। বিধায় তৃষ্ণা পেলে হরিণের পাল ছুটে এসে কিল্লার কূপে। তাই প্রতিনিয়তই শত শত হরিণের পদচারণায় মূখরিত থাকে এ মুজিব কেল্লা। যার কারণে, ভ্রমণ পিপাশুরা হরিণ দেখার ইচ্ছায় প্রতিদিনই মুজিব কেল্লায় ভীড় জমায়। কেল্লাটি ৩-০০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। যার চারদিকে কেওড়া বাগান। বাগানের প্রবেশ দ্বার দিয়ে বয়ে গেছে সরু খাল। খাল অল্প কিছুদূর এগুতেই সাগর মোহনা। কেলস্না হতে সাগর সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। কুকরীমুকরী বাজার থেকে কেল্লার দূরত্ব সারে চার কিলোমিটার। কিন্তু এর মাঝে যোগাযোগের কোন সড়ক নেই। কর্দমাক্ত মাঠ অতিক্রম করে কেল্লায় পৌঁছতে হয়। বিকল্প হলো নৌ-পথ।
বালি চিক চিক সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর মজা পেতে হলে যেতে হবে কুকরীমুকরীর বালু চরে। চরের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে ১৬৯৬ একর বাগান। এ বাগানকে বলা হয় চরজমির। কিন্তু চরজমিরের পশ্চিম এবং কলিরচরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে অনমত্ম সাগর সৈকতে আসতে হবে নৌ-যানে করে। কুকরীমুকরী বাজার থেকে মুজিব কেল্লা পর্যমত্ম সড়ক নির্মাণ এবং কেল্লা থেকে সাগর পর্যমত্ম পাঁচ কিলোমিটার খালটি সংস্কার করে দর্শণীয় কেল্লাটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত করা যায়।
চর কুকরীমুকরী ছবি - নেট
https://www.facebook.com/ronystourinfo
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন